Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বাংলাদেশের পুষ্টি নিরাপত্তায় মিষ্টিআলু

ড. হরিদাস চন্দ্র মোহন্ত
মিষ্টিআলু একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্করা প্রধান কন্দালজাতীয় ফসল। এটি উষ্ণ ও অবউষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের ফসল হলেও বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই কম বেশি এর চাষাবাদ হয়। খাদ্য ও কৃষিসংস্থা (২০১৯) এর তথ্য মতে, বর্তমানে বিশে^র প্রায়  ১১৯টি দেশে  মিষ্টিআলুর চাষাবাদ হয়ে থাকে। পর্তুগিজ বণিকদের মাধ্যমে এটি ভারতবর্ষসহ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। মধ্য আমেরিকায় উৎপত্তি হলেও বর্তমানে এর সর্বোচ্চ উৎপাদনকারী দেশ চীন।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে খাদ্যের পুষ্টিমান সরবরাহ বৃদ্ধিকে একটি অন্যতম জনস্বাস্থ্য কৌশল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে রঙিন শাঁসযুক্ত মিষ্টিআলু খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় একটি সম্ভাবনাময় ফসল। কেননা কৃষক এটি খুব সহজে অল্পখরচে চাষাবাদ করতে পারে। এর রোগবালাই তুলনামূলক অনেক কম। এর ভক্ষণযোগ্য মূলসিদ্ধ করে, বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন চিপস, আটা, ময়দা ইত্যাদি প্রস্তুতকরণে, কনফেকশনারি দ্রব্যাদি তৈরিতে, অ্যালকোহল শিল্পে ব্যবহার করা হয়। এমনকি এর পাতা সবজি হিসেবে ব্যবহার হয় এবং গোখাদ্য তৈরিতে ও ব্যবহার যোগ্য। মিষ্টিআলুতে শুষ্ক বস্তুর পরিমাণ আলুর থেকে বেশী (প্রায়>৩০%) হওয়ায় প্রক্রিয়াজাত শিল্পে এটিকে ব্যবহারের সুযোগ তুলনামূলক বেশি।


বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই মিষ্টিআলুর চাষ হয়। স্থানীয় জাতগুলোর গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ১০ টনের কম কিন্তু উচ্চফলনশীল মিষ্টিআলুর জাতের ফলন প্রায় ৩০-৪৫টন/হেক্টর। গত ২০ বছরে মিষ্টিআলুর চাষের জমির পরিমাণ ও উৎপাদন ক্রমাগত কমছে কিন্তু ২০০৪-০৫ সাল থেকে উচ্চফলনশীল জাত ব্যবহারের কারণে  এর গড় ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২০১৮-১৯ মৌসুমে ২৭১০০ হেক্টরে মোট ২,৮৪,৭০২ টন মিষ্টিআলু উৎপাদিত হয় যার একক ফলন ছিল প্রতি হেক্টরে প্রায় ১০.৪৭ টন (বিবিএস, ২০১৯)।


মিষ্টিআলুতে প্রচুর পরিমাণ শর্করা, খনিজ,  ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-সি ও ভিটামিন-ই থাকে। বিশেষ করে কমলা ও বেগুনি শাঁসযুক্ত মিষ্টিআলুতে বিটা ক্যারোটিন ও এন্থোসায়ানিন রয়েছে। আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩০ হাজার শিশু রাতকানা রোগে আক্রান্ত হয়। রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সরকারি উদ্যোগে প্রতি বছর শিশুদের ভিটামিন-এ ক্যাম্পেইন করে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। এতে দেশের প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। অথচ কমলা শাঁসযুক্ত মিষ্টিআলু খেয়ে আমরা অতিসহজেই  ভিটামিন এ এর অভাব পূরণ করতে পারি।


পুষ্টি গুণাগুণ
এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, রঙিন শাঁস যুক্ত মিষ্টিআলু প্রতিদিন ১২৫ গ্রাম করে  খেলে একটি ৫-৬ বছরের শিশুর ভিটামিন-এ এর চাহিদা পূরণ হয়। একজন পূর্ণবয়স্ক লোকের জন্য মাঝারি আকারের (১৫০-২০০ গ্রাম) একটি  মিষ্টিআলুই যথেষ্ট। এর গøাইসেমিক ইনডেক্স অন্য ফসলের তুলনায় কম হওয়ায় ডায়াবেটিক আক্রান্তরা শর্করা জাতীয় খাবারের পরিবর্তে  মিষ্টিআলু খেতে পারেন। এছাড়াও মিষ্টিআলুতে বিদ্যমান বিটা ক্যারোটিন ও এন্থোসায়ানিন নামক এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং এন্টি কারসিনোজেনিক উপাদান বিভিন্ন ধরনের  ক্যান্সার নিরাময়ে কার্যকরি ভূমিকা রাখতে পারে। মিষ্টিআলুর ভিটামিন ই৬ রক্তনালীকে স্বাভাবিক রেখে হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।


জাতীয় পুষ্টি নিরাপত্তায় মিষ্টিআলুর গুরুত্ব
উন্নত ও পুষ্টিসমৃদ্ধ জাতের চাষ : জাতীয় পুষ্টি নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখার স্বার্থে মিষ্টিআলুর চাষাবাদ ও ব্যবহার ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন, যা ভোক্তার  চাহিদা বৃদ্ধির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মিষ্টিআলুর পুষ্টি গুণাগুণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, খাদ্যের বহুবিধ ব্যবহার, বীজের প্রাপ্যতা, দ্রæত বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া ও প্রক্রিয়াজাতকরণ সুবিধা, সংরক্ষণ সুবিধা বৃদ্ধি ইত্যাদি বিভিন্ন মাধ্যমে ভোক্তার চাহিদা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে এ সম্বন্ধীয় প্রশিক্ষণ ও প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে এর দ্রæত সম্প্রসারণ করা সম্ভব।


শাক হিসেবে : বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় মিষ্টিআলুর কচি ডগা শাক বা পাকোড়া/বড়া হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কমবেশি সব জাত-ই শাক হিসেবে ব্যবহার উপযোগী। তবে বারি মিষ্টিআলু-৪, বারি মিষ্টি আলু-৮, বারি মিষ্টিআলু-১০, বারি মিষ্টিআলু-১১ ও বারি মিষ্টিআলু-১২ জাতসমূহ খুবই সুস্বাদু ও উপাদেয় সবজি হিসেব ব্যবহার করা যেতে পারে। কচি ডগার শাকে ভিটামিন-এ ও ফলিক এসিড পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়। ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার শিশুর স্বাভাবিক বুদ্ধি বিকাশে গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুবই উপকারী।


বসতবাড়িতে চাষ : বসতবাড়ির পাশে মিষ্টিআলুর লতা রোপণ করলে সারা বছর সবজি/শাক হিসেবে মিষ্টিআলু ব্যবহার করা যাবে। এর ফলে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে মিষ্টিআলুর লতা বর্ধন ও শাক বিক্রি করেও বাড়তি উপার্জন করা যেতে পারে।


শস্যবিন্যাস পরিবর্তনে : আমাদের দেশের আবহাওয়ায় রবি মৌসুম তথা অক্টোবর-নভেম্বর মাসে মিষ্টিআলুর লতা রোপণ করে ফেব্রæয়ারি-মার্চ মাসে কন্দ উত্তোলন করা হয়। এক একক জমি থেকে মিষ্টিআলু যে পরিমাণ শর্করা, ভিটামিন ও খনিজ উপাদান উৎপন্ন করে তা অন্যান্য ফসল থেকে অনেক বেশি হওয়ায় এবং এর বাজারমূল্যও তুলনামূলক বেশি হওয়ায় এর চাষাবাদ অত্যন্ত লাভজনক। যে কারণে কৃষক খুব সহজেই রবি মৌসুমে মিষ্টি আলুচাষে আগ্রহী হবে।  এ ছাড়া লবণাক্ত এলাকা ও চরাঞ্চলেও এটি জন্মাতে পারে।


সারণি ১ : মিষ্টিআলু উৎপাদনে আয় ও ব্যয়ের প্রাক্কলন

ব্যয়ের বিবরণ ব্যয়(টাকা/হেক্টর)
শ্রমিক মজুরি ২৭০ জন (৫০০/-টাকা হারে) ১,৩৫,০০০/-
জমি তৈরী বাবদ ৭,০০০/-
সারের মূল্য  (গোবর, ইউরিয়া, এমওপি ও টিএসপি) ২০,০০০/-
বীজের কাটিং ক্রয় (প্রতি হাজার ২৫০ টাকা) ১৪,০০০/-
পানি সেচ বাবদ ৬,০০০/-
বালাইনাশক ওষধ ক্রয় ২,০০০/-
জমি ভাড়া (দুই ফসলি হিসাবে এক ফসলের) ৫,০০০/-
বিবিধ ২,০০০/০
মোটব্যয় ১,৯১,০০০/-
মূলধনের উপর ১২% হারে ৬ মাসের সুদ ১১,৪৬০/-
সর্বমোট ব্যয় ২,০২,৪৬০/-
আয়ের বিবরণ আয়(টাকা/হেক্টর)
বিক্রয় থেকে আয়- মিষ্টিআলুর গড় ফলন ৩০ টন এবং কৃষকের মাঠে টন প্রতিমূল্য ২০,০০০/- হারে ৬,০০,০০০/-
নিটলাভ (১১-১০) ৩,৯৭,৫৪০/-

আয় ব্যয়ের অনুপাত (BCR) ১ ঃ ৩.১৪ (প্রতি এক টাকা ব্যয়ে ৩.১৪ টাকা লাভ)
 

* জমি ভাড়া ও শ্রমিকের মজুরী এলাকাভিত্তিতে কম বেশি হতে পারে।
প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে : আমাদের দেশে মিষ্টিআলুকে লাভজনক ফসল করার নিমিত্তে মিষ্টিআলুর প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে এর ব্যবহার বাড়ানো জরুরি। যেহেতু মিষ্টি আলুকে উত্তোলনের পর স্বাভাবিক তাপমাত্রায় মাত্র ১-১.৫ মাস সংরক্ষণ করা যায়। ফলে মিষ্টিআলুর প্রাপ্যতা সারা বছর নিশ্চিত করতে হলে প্রক্রিয়াজাতকৃত খাদ্য হিসেবে এর ব্যবহার জরুরি। উন্নত বিশে^ও বিশেষ করে চীন, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, আফ্রিকা মহাদেশের কিছু দেশ যেমন- মোজাম্বিক, ঘানা, উগান্ডা, রোয়ান্ডাতে প্রক্রিয়াজাতকৃত খাদ্য হিসেবে এটি সারা বছর ব্যবহৃত হয়। উল্লেখ্য যে, রান্নার পরেও রঙিন শাঁসযুক্ত মিষ্টিআলুতে ৭০% এর বেশি বিটাক্যারোটিন অবশিষ্ট থাকে (লরি ও অন্যান্য, ২০১৫)। যে কারণে প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবারের মাধ্যমে সারাবছর ভিটামিন-এ এর চাহিদা নিশ্চিত করা সম্ভব। কমলা ও বেগুনি শাঁস যুক্ত মিষ্টিআলু হতে উন্নত মানের চিপস্, ফ্রেন্স ফাই, আটা-ময়দা, কনফেকশনারি দ্রব্যাদি তথা কেক, বিস্কিট, পাউরুটি, হালুয়া, পায়েস, পরাটা, রসগোল্লা,  ক্ষীর, পুরি, নিমকি ও জুস ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার খাদ্য তৈরি করা যেতে পারে।


মিষ্টিআলুর উন্নত জাতসমূহ
কন্দাল ফসল গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, দীর্ঘ দিন যাবৎ এ ফসলের উন্নয়নের জন্য কাজ করে আসছে। দীর্ঘ দিন গবেষণার পর এ পর্যন্ত ১৬টি উচ্চফলনশীল ও গুণাগুণ সমৃদ্ধ মিষ্টিআলুর জাত উদ্ভাবন করেছে। মিষ্টিআলু রবি মৌসুমে করা হয়ে থাকে। এ লক্ষ্যে বারি উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল মিষ্টি আলুর জাত যেমন- বারি মিষ্টিআলু-২, বারি মিষ্টিআলু-৪, বারি মিষ্টিআলু-৮, বারি মিষ্টিআলু-১২, বারি মিষ্টিআলু-১৪ ও বারি মিষ্টিআলু-১৬ চাষ করা যেতে পারে। তবে জাত নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভোক্তার পছন্দকে   অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে।        
মিষ্টিআলুর প্রাপ্তিকাল
চারা রোপণের ১০০ থেকে ১২০ দিন পর কন্দমূল উত্তোলন উপযোগী হয়, তবে ১৪০ দিনের বেশি রাখলে শাঁস আঁশযুক্ত হয় এবং উইভিল পোকার আক্রমণ বেড়ে যায়। আমাদের দেশে মার্চ-এপ্রিল মাস মিষ্টিআলুর বাজারে প্রাপ্যতা বেশি থাকে। মাটির সাধারণ জো অবস্থায় কোদাল দ্বারা কুপিয়ে মিষ্টিআলু উত্তোলন করা হয়। উত্তম ব্যবস্থাপনায় উচ্চফলনশীল মিষ্টিআলুর জাতগুলোর ফলন ৩০-৪৫ টন/হেক্টর হয়ে থাকে।  
বহুবিধ ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের পুষ্টি নিরাপত্তায় মিষ্টিআলু উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে, বিশেষ করে ভিটামিন-এ এর অভাব পূরণে। উন্নত জাতের মিষ্টিআলুর প্রতি একক জমিতে ভিটামিন-এ উৎপাদন ক্ষমতা অন্যান্য ফসলের তুলনায় অনেক বেশি। এ ফসলটিকে দেশব্যাপী জনপ্রিয় করতে ফসল সম্পর্কে নিবিড় জ্ঞান ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন। পাশাপাশি বছরব্যাপী প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দীর্ঘসময় সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে মিষ্টিআলুর ব্যবহার বৃদ্ধি অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে। এ লক্ষ্যে স্বাস্থ্য, গ্রামীণ ও সামাজিক উন্নয়ন এবং কৃষি উৎপাদন সম্পর্কিত সরকারি-বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগসমূহ জাতীয়স্তরে মিষ্টিআলু খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায়  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। য়

মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত¡ গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, মোবাইল : ০১৭৮৩৩২৯৯৭৫,  ই-মেইল :  hmohantatere@gmail.com

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon